দখিনের খবর ডেস্ক ॥ স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা জারির পরই কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে স্কুল-কলেজগুলো। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী, এক দিনে সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোন ক্লাসের শিক্ষার্থী কবে আসবে সে হিসাব-নিকাশও শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। মাউশি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৩৯ পৃষ্ঠার গাইডলাইন অনুযায়ী আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নানা ধরনের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। ইউনিসেফের সহায়তায় গত শুক্রবার রাতে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা ও গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়। শিক্ষকরা বলছেন, যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন না। তবে অবকাঠামোগত কাজ, যেমন—টয়লেটের সংখ্যা বাড়াতে হলে আরো বেশি সময় লাগতে পারে। তবে যদ্দুরই কাজ শেষ হোক না, দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে মত বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের। স্কুল, কলেজসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্দেশ করে দেওয়া মাউশির নির্দেশনায় বলা হয়, ‘এখন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। কভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। সেই লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করার জন্য গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গাইডলাইন অনুযায়ী আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পাওয়া মাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া যায়। শুধু করোনাকালীন সমস্যা মোকাবেলা নয়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থায়ীভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ, আনন্দময় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে।’ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতিসংক্রান্ত গাইডলাইন আমরা পেয়েছি। আমাদের নিজেদের ব্যবস্থাপনায় আমরা কাজ শুরু করেছি। গাইডলাইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করতে খুব বেশি সময় আমাদের লাগবে না। তবে যেসব স্কুলে অবকাঠামোগত কাজ করতে হবে, তাদের সময়ের প্রয়োজন। আমার মনে হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।’ ইউনিসেফের সহায়তায় তৈরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার গাইডলাইন অনুযায়ী, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বর ও খোলা জায়গায় এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্বে বসার বা বিচরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এমনকি বেঞ্চে বসাসহ টয়লেট বা প্রবেশপথেও তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনে মার্কিং করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, ১২ বছর বা এর উর্ধ্বে সবাইকে মাস্ক পরতে উৎসাহিত করতে হবে। ছয় থেকে ১১ বছর পর্যন্তদের রোগ বিস্তারের ঝুঁকি অনুযায়ী মাস্ক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে ফেলতে হবে। প্রতি ৩০ জন মেয়ে শিক্ষার্থীর জন্য একটি ও ৬০ জন ছেলে শিক্ষার্থীর জন্য একটি টয়লেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শ্রেণিকক্ষসহ সব জায়গায় দিনে একবার বা শিফট শুরু হওয়ার আগে-পরে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। শ্রেণিকক্ষ-লাইব্রেরিতে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী ক্লাস শুরু ও শেষের সময়সূচি শিফটে ভাগ করে নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী শারীরিক দূরত্ব মেনে প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে দূরশিক্ষণ ও সপ্তাহ বিভাজন করে একেক দলকে একেক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাইডলাইন অনুযায়ী বেশির ভাগ স্কুল-কলেজেরই সব শিক্ষার্থীকে এক দিনে আনার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিনই ডাকা হতে পারে। এ ব্যাপারে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন কতজন শিক্ষার্থীকে ক্লাস করানো সম্ভব, সে পরিকল্পনাগুলোও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তৈরি করবে। ঢাকার বাইরের স্কুল-কলেজগুলোও গতকাল মাউশি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে নির্দেশনা পেয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তারা প্রস্তুত হতে পারবে বলে জানিয়েছে।
Leave a Reply